আরব সাগরের তীর মুম্বাইয়ে দু’দিন :আইকনিক ভবন, কেতাদুরস্ত ফ্যাশন, ব্যস্ততম কসমোপলিটান, ৯০ লক্ষ বস্তুিবাসী

এপ্রি ২৪, ২০২৩

মুম্বাই জুড়ে বিস্তৃত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। মুম্বাই স্টক এক্সচেঞ্জ, মুম্বাই এর সুবিখ্যাত বন্দর, ততোধিক বিখ্যাত বলিউড ফিল্ম ও ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি। আরব সাগরের তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা শহর। অজস্র আকাশচুম্বী ভবন, আইকনিক টাওয়ার, ট্রেন, মেট্রোরেল, সারি সারি ঝাঁ চকচকে গাড়ি, বাস, কেতাদুরস্ত পোষাক, গোলকধাঁধার মত দৈত্যাকৃতি মেগা শপিং মল, বিবিধ বর্ণ- ধর্ম- জাতের মানুষের সমাগম। মুম্বাই জেগে থাকে রাত দিন। ছত্রপতি শিবাজি এয়ারপোর্ট তাই হয়ে উঠেছে ভারতের অন্যতম ব্যস্ততম এয়ারপোর্ট। এয়ারপোর্ট ছাড়িয়ে এক্সপ্রেস হাইওয়ে, ফ্লাইওভার ধরে সড়কদ্বীপ ও বিভাজিকায় সবুজ, সড়কের দুপাশের সবুজ যে কোন যাত্রীকে চোখের আরাম দেবে এটা নিশ্চিত করে বলা যায়।

মুম্বাইয়ে পৌঁছার আগেই জানতে চাইছিলাম অনলাইনে, কী করা যায় স্বল্প সময়ে। চোখ আটকে গেল। মন থমকে দাঁড়াল। Slum Tour at Mumbai। মানে মুম্বাইয়ের বস্তি ঘুরে দেখার ট্যুর। বস্তির সংখ্যা এখানে ২৪০০। বস্তুিবাসী মানুষের সংখ্যা প্রায় ৯০ লক্ষ। ধারাবি সবচেয়ে বিখ্যাত বা কুখ্যাত বস্তি। যা নিয়ে নির্মিত হয়েছে সিনেমাও। অপরাধ আর অবিচার এর পাশাপাশি এই বস্তিবাসীরা সবচেয়ে বেশি ইউটিলিটি বিল এর জন্য খরচ করেও যাপন করে মানবেতর জীবন। এক কক্ষ বিশিষ্ট অন্তত পাঁচ হাজার কারখানা চালায় এরা। অশিক্ষা, অর্ধশিক্ষা, কুশিক্ষা নিয়ে আর অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বাস করেও এরা নির্মাণ করে অজস্র পণ্য। সেবা যোগায় মুম্বাইয়ের আলো জ্বালানোর সলতে হয়ে। হাজারো কারিগরি আর কৃৎ কৌশল নিয়ে ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে ভাগ্যান্বেষী ও ভাগ্যাহত মানুষেরা এখানেই মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজে নেয়। এঁরাই সিটি বাজায় সিনেমা হলে। দিলীপ কুমার, বৈজয়ন্তী মালা, অমিতাভ – রেখা, কিং খান আর কাপুরদের কাস্টমার এঁরাই। নগর মুম্বাইয়ের সুউচ্চ ভবন ও প্রশস্ত সড়কের নির্মাতা এঁরা। পয়ো বর্জ্য নিষ্কাশন আর নগর পরিচ্ছন্নতার নির্মাতাও এ মানুষেরা। আর ট্যুরিস্ট কাস্টমার এর পণ্যও বুঝি তবে তাঁরাই!

মহারাষ্ট্রের রাজধানী মুম্বাই। ক্ষমতায় ছিল এনসিপি। ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি। কংগ্রেসের পেট চিরে বের হওয়া শারূ পাওয়ার এর দল। বরাবরই শক্তিশালী ছিল বাল ঠাকরের
শিব সেনা। গেল নির্বাচনে কেউই নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলনা। কংগ্রেস আর এনসিপির সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় এলো বাল ঠাকরের ছেলে উদ্ভব ঠাকরের দল মুখ্যমন্ত্রী হয়ে। বিজেপিও পাকা খেলুড়ে। শিব সেনার একাংশকে ভাগিয়ে নিয়ে শীঘ্রই তারা ক্ষমতায় এলো শিব সেনার একাংশকে সমর্থন জানিয়ে। মার্কা, দল, আদর্শ আজ আর প্রাচীর নয়। প্রাচীর হল ক্ষমতা নিরংকুশ করতে বাধা সকল টুটাতে হবে। আলখেল্লা পর, অসুবিধা নেই। নয়া শ্লোগানে মুখরিত হও। কোন বাতচিত নেই। প্রশান্তরা আছেন। শ’ কোটি ঢালবেন। ক’টা সিট চান? চুক্তি করুন। রাজনীতি নেই। তার বালাইও নেই।

ইন্দিরা উত্তর জমানায় রাজীব গান্ধীর হাত ধরে নয়া ভারতের কাংখিত লক্ষ্য প্রবৃদ্ধি। শ্রীযুক্ত হওয়া। শ্রীমুক্ত হওয়া। বস্তি সব জংগল। গুঁড়িয়ে দাও। আলিশান বাড়ি আর ফাইন গাড়ি, সাফল্যের নয়া চাবিকাঠি। কী করে এলো? বলার দরকার নেই। বাহুল্য সব। কমনওয়েথ গেমসের কেনাকাটার নামে ভারতের তুঘলকি কান্ড কারো মনে বছে কী? মনে পড়ে কী রুপপুরের সোনার খনিতে কাদের জুটেছিল অমূল্য রতন!

এ এক নয়া জমানা। সব নীতিকথা ঈশপের গল্প। এ এক নয়া জীবন। সব হারিয়ে আারাধ্য হয়ে বেঁচে থাকে রেমন্ড স্যুট পরিহিত কমপ্লিট ম্যান। যার ব্যালকনি থেকে স্লাম দর্শনীয়। উপভোগ্য। এ জীবন কী মানুষের না কাক তাড়ুয়ার? ইচ্ছের নাকি আরোপিত জীবনের? “কোথায় শান্তি পাব বল কোথায় গিয়ে? ” মৌসুমী ভৌমিক, আপনিই বলুন।

আজ সারাদিন ঘোরা হল মুম্বাই। ছবি তোলা হল কিছু। দিলাম সেসব। মুখ নয় হয়ত মুখোশ। কিংবা এই মুখশ্রী।

৩ এপ্রিল, ২০২৩