“ওগো সুদূর, বিপুল সুদূর, তুমি যে বাজাও ব্যাকুল বাঁশরি-“

এপ্রি ২৪, ২০২৩


আমেরিকার রকি পর্বতমালার সবচেয়ে উচ্চতম শৃঙ্গের নাম পাইকস পিক ( Pikes Peak) ।১৪,১১৫ ফুট উচ্চতায় পাইকস ন্যাশনাল ফরেস্টে এটির অবস্থান। কলোরাডো স্প্রিং থেকে জোড়া বগির চমৎকার একটি ট্রেনে চড়ে যাওয়া যায় এই পাইকস পিকে। কয়েক জোড়া ট্রেন নির্দিষ্ট সময় পর পর পাইকস পিক ও কলোরাডো স্প্রিং এর মধ্যে যাওয়া আসা করে। গতকাল অনেক রাতে এসে পৌঁছেছি। ট্রেনের টিকিট কাটা হয়েছিল আরো কয়েকদিন আগেই। আমেরিকায় আমাদের সর্বক্ষণের অভিভাবক, বড় ভাই ও বন্ধু মাসুদ রহমান অনলাইনে সে ব্যবস্থা করেই রেখেছিলেন। দুপুর ২টা ৪০ মিনিটে ছিল আমাদের নির্দিষ্ট যাত্রার সময়। আগেভাগেই স্টেশনে পৌঁছা। যথারীতি ব্যবসা বুদ্ধিতে প্রবল মার্কিনীরা স্টেশনে পসরা মেলে সাজিয়ে বসিয়েছে বেশ ক’টা দোকান। নানান স্মারক চিহ্ন, ক্যাপ, টিশার্ট, স্যুভেনির, মগ, কাপ, স্টিকার আরো এটা সেটা সাজিয়ে রেখেছে। বিক্রি ও যথেষ্ট।

ট্রেন এলো। লাল রঙের ঝকঝকে ছোট ট্রেন। সিট পালি নেই। ঠিক সময়ে যাত্রা। হাস্যোজ্জ্বল একজন নারী ধারা বিবরণী দিতে শুরু করলেন। বিশালাকার পাথর আর গাছের পর্বতশ্রেণী। মাঝে হ্রদ। কোমল হাওয়া বইছে। জানালার কাচগুলো অর্ধেকটা নামানো। লক্ষ বছর আগে আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ থেকে ছিটকে বেরিয়ে আসা লাভাগুলো কঠিন কঠোর পাথরের উঁচু পাহাড় তৈরি করেছে। কলোরাডোর কোথাও কৃত্রিম বাঁধ জন্ম দিয়েছে বিশাল হ্রদের। রৌদ্র করোজ্জল দিন ছিল আজ। মৃদু ঠান্ডা হাওয়া। পরিচ্ছন্ন প্লাটফর্ম। পরিচ্ছন্ন কোচ দুটি। ছবির মত সাজানো।

পাথর ও গাছের বিশালতার সামনে দাঁড়িয়ে অবাক চোখে তাকাতে হয়। জনমানবহীন। মাঝে মাঝে দু একটি বাড়ির হদিস মেলে। ঠিক এক ঘন্টার কিছু অধিক সময় গড়িয়ে ট্রেন ধীর লয়ে ১৪০০০ ফুট উপরে পাইকস পিকে উঠে এলো। পর্বত শৃঙ্গে থরে থরে অডিও ভিডিও আর স্থির চিত্রের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হয়েছে দেড়শত বছর আগে যে সাহসী পুরুষেরা নীচ থেকে উপরে উঠে আসবার চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন তাদের কথা মনে রেখে। আছে চমৎকার রেস্তোরাঁ ও প্রক্ষালন এর ব্যবস্থা। পর্বত শৃঙ্গের উচ্চতম শিখরে দাঁড়িয়ে কলোরাডোর আকাশ সীমায় যতটুকু ধায় চোখ ততদুরে চোখ মেলে কী, আজকের যে মানুষেরা নিরাপত্তার চাদর মুড়ি দিয়ে অবকাশ আর সৌন্দর্য খুঁজে বেড়ান, তারা কী একবার হলে সাহস আর সংকল্পকে সাথী করে আগুয়ান কীর্তিমানদের মনে রাখেন?

জানিনা। হয়ত রাখেন। অথবা ভুলে যান। কিন্তু, মানুষের পদচিহ্ন কী সহজে হারায়? সৃষ্টিতেই থাকে মানুষের অবিনশ্বর কীর্তি ও কর্মগাঁথা। পাইকস পিকে এক ঘন্টার বিরতি দিয়ে আবার নেমে আসে ট্রেন। আমরাও ফিরি। এক পশলা বৃষ্টি গায়ে মেখে। ফেরার পথে কথা হয় অনবরত এক ট্যাক্সি চালক এর সাথে। একজন কালো মানুষ। তাঁকপ জিজ্ঞেস করি, বব মার্লের “Buffelo Sodier, stolen from Africa, brpught to America ” গান সে শুনেছে কীনা? আমার পছন্দের শিল্পী শুনে গুণ গুণ করে গাইতে গাইতে তাঁর মোবাইল ফোনে চালিয়ে দেয়। পূর্ব পুরুষের নির্মিত গৌরব গাঁথার সৌধে দাঁড়িয়ে উত্তর পুরুষের ভালবাসা মেঘলা আকাশের সাথে হোটেলের রুমে বয়ে আনি।