করোনা’র দিন দৈর্ঘ্যের চেয়েও দীর্ঘতর

এপ্রি ২০, ২০২৩

২৫ মার্চ সন্ধ্যায় সকলে যার যার বাসায় ঢুকে গেছে । মোটামুটি বাঁচবার অপরিহার্য জিনিসপত্র নিয়ে । একই দিনে গ্রাম মুখী কোটি মানুষের স্রোত ছুটে গেছে । ২৬ মার্চ । অন্যরকম স্বাধীনতা দিবস । প্রায় ঘরবন্দি জীবন । গলির ভেতর খুবই সামান্য দু’এক জনের চলাচল । ঔষধ আর নিত্যপণ্যের দোকান খোলা । রেস্টুরেন্ট বন্ধ । ছোট বড় মাঝারি নির্বিশেষে । নামাজের সময় কিছু মুসল্লী দেখা যায় । ঝরঝরে শরীর ঠিক রাখতে দু একজন হাঁটেন বিকেলে । ক্রমশঃ রিক্সা বাড়ছে। ভ্যান গাড়ি নিয়ে সবজি বিক্রেতা নিয়মিত বের হচ্ছেন । মাস্ক ঢেকেছে মুখ সর্বত্র । থমকে গেছে নগর জীবন । ব্যস্ততম নগরী সন্ধ্যার পরে যেন ভুতুড়ে শহর ।

মোবাইল ফোন এখন যোগাযোগ এর অবলম্বন । বড় শহরের দৃশ্য এখন মোটামুটি এরকম । গ্রামগুলো কখনো শহরের মত ছোটে না । তবে অচঞ্চল – নিস্তরঙ্গ গ্রাম হারিয়েছে বহুকাল হল। তবে শুনি ,সোস্যাল ডিসটেন্সিং তীব্রতর নয় গ্রামে ।

ব্যস্ততম জীবনে নাভিঃশ্বাস ওঠে যাদের , প্রতিদিন এর ছোটায় ক্লান্ত সেই মানুষ আবার একঘেয়ে হয়ে উঠছেন । ঘুম- ঘরকন্না- খাওয়া- আবার ঘুমিয়ে পড়া । জিহ্বায় স্বাদ বদল । অনেক দিনের না ছোঁয়ায় জমে থাকা কোন এক সেল্ফের ময়লা , বারান্দার ধুলো , মাকড়সার জাল , কাপড় চোপড়, আসবাব সাফ সুতরো হচ্ছে । টিভি অন । নিউজে চোখ । মুভি টাইম বেড়েছে। পড়ুয়ার হাতে বই । তারপরও ক্লান্তিকর । ক্লান্তিকর এই অনিশ্চয়তার বৈঠা বেয়ে যাওয়া । কবে নামবে জীবন জীবনের চিরন্তন পথে ?

শলা বেড়েছে। অনুমান ও তথ্যের আদান প্রদান বেড়েছে । বিশেষজ্ঞের সংখ্যা দৃশ্যমান । পাল্লা দিয়ে বেড়েছে গুজব। ভুয়া তথ্য । ষড়যন্ত্র তত্ত্ব প্রবল। সন্ধেহের চোখ এদিক ওদিক । শি জিন পিং এর মুখে করোনা ভাইরাস আঁকা ছবি ফেসবুকে । আক্রান্ত হবার আগেই সম্ভাব্য আক্রান্ত বিচ্ছিন্ন নয়, অস্পৃশ্য । ডাক্তার মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা’র বক্তব্য নয় , শাড়ি হয়ে উঠেছে আলোচনা । আক্রান্তের সংখ্যা অবিশ্বাস্য ভাবছেন কেউ। ছোট মন্ত্রী কথার তুবড়িতে হারিয়ে দেন বড় মন্ত্রীকে । কথার উপর ট্যাক্স নাই । কাজেই কথা লাগামহীন ।

পুলিশ পেটায় । সেনা পেটায় । আমলা কান ধরায় । সংগঠিত উদ্যোগ বাড়ছে । আবার দরদী হাতে পুলিশ খাবার পৌঁছে দেয় । সেনা সদস্য লিফলেট দেয় । নিরাপদ দূরত্বের মার্কিং করে । পরীক্ষার কিট বেড়েছে । বাংলাদেশী ধনকুবেরদের কেউ কেউ হাত খুলছেন। বরাবর এর মত গার্মেন্ট শিল্প নাবালক। রাষ্ট্রের ছায়া চায় । সাবালক স্বাবলম্বী আর হলনা। দিনে এনে দিনে খাওয়া মানুষের কষ্ট বাড়ছে । সরকারের সদিচ্ছা কিংবা সামর্থ্য যদিও থাকে, এদের জন্য বরাদ্দ উপর থেকে গড়িয়ে নীচে ঠিক ঠাক পৌঁছবে তো ? সিস্টেমের ছিদ্র আর সিস্টেমের পাহারাদারদের হাতের ফাঁক গলে কতটা পৌঁছবে কে জানে ?

সংক্রমণ এর কেন্দ্র এখন এশিয়া নয়, ইউরোপ আর আমেরিকা । উহান নয় , উদ্বেগ আর আহাজারী এখন মিলান – মাদ্রিদ- নিউইয়র্ক । ক্রমশঃ কালো হয়ে উঠছে রাতগুলো । প্রতিটি ভোর , আরো অনেক মানুষ এর অকাল বিদায় সংবাদ । প্রতিটি দিন , উৎকণ্ঠিত যাপন। জীবনের অলস – অচল বয়ে যাওয়া । যদিও, চিকিৎসক আর স্বাস্থ্য কর্মীদের জন্য তা প্রযোজ্য নয় । বরং, আরো ভয়ংকর উদ্বেগের । তাঁদের নিজেদের জন্য, রোগীদের জন্য । টহলরত পুলিশ আর সেনা সদস্যদের দিন প্রচন্ড ব্যস্ততার ।

তবুও, এই দিন সকলের জন্যই হয়ে উঠেছে ভীষণ দীর্ঘতর । এইসব দিন ও রাতের অবসান কবে ? এই ভাবনা সকলের । উত্তর যার অজানা ।