করোনা: রুদ্ধ জীবনে, মুক্ত প্রাণ এর ভাবনা

এপ্রি ২৭, ২০২৩

একটি ছোট্ট পরিসরে, ছোট্ট একটা পরিবার যার , তারো একটি আপত্কালীন ভাবনা থাকে । থাকে হয়ত স্পষ্ট ও অস্পষ্ট নানান উদ্যোগ । স্বজ্ঞানে অথবা কাণ্ডজ্ঞানে।

বছর কয়েক আগে, একটি দুঃসহ রাত কাটিয়েছিলাম টিভি সেটের সামনে । একটা ছোট্ট বাচ্চা খেলতে গিয়ে পড়ে গিয়েছিল, একটা গভীর পাইপ এর খোলা মুখ দিয়ে । আটকে ছিল । বেঁচে ও ছিল অনেকগুলো ঘন্টা । সরকারের অনেক সংস্থা আন্তরিকভাবে অনেক কসরত করেও , একসময় ঘোষণা দিয়ে দিল , উদ্ধারকাজ বন্ধ । ভেতরে কেউ নেই ।

ঘুমক্লান্ত চোখে অবশেষে সেদিন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম । পরদিন, সেই খোলা মুখ চিরতরে রুদ্ধ করার আগে জানা গেল , বাচ্চাটাকে তুলে আনা হয়েছে । এবং মৃত ।

তারো একবছর পর , আমার বাল্য বন্ধু Biman Chowdhury সহ ঢাকার একটি শিপ বিল্ডিং অফিসে পরিচয় হল , এক মাঝবয়সী ভদ্রলোক এর সাথে । জানলাম, ইনি তিনিই। ঢাকার কোন এক জায়গায় তিনিও সেদিন টিভি সেটের সামনে বসে ঐ ঘটনা দেখছিলেন। তবে তিনি আমার মত দর্শক ছিলেন না, তিনি তৎক্ষণাৎ চলে গেছেন , তাঁর পরিচিত এক লেদ মেশিন এর কারখানায় । তিন ঘন্টা নিজে বসে থেকে নিজের উদ্ভাবনী শক্তি দিয়ে একটি বিশেষ আংটা জাতীয় বস্তু তৈরী করলেন । এবং , মাত্র দুজন সহকর্মী নিয়ে চলে গেলেন ঘটনাস্থলে । এবং তিনিই শিশুটিকে তুলে আনলেন কয়েকশ ফুট গভীর থেকে ।

অথচ, আমাদের ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সহ অন্যান্য সংস্থা তখন উদ্ধার কাজ পরিত্যক্ত ঘোষণা করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেছেন ।

আমরা দেখেছি নিকট অতীতে রানা প্লাজার ভবন ধ্বসে সহস্রাধিক মানুষের মৃত্যু । উদ্ধার কাজে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ উদ্যোগ ও আন্তরিকতার পরেও , উদ্ধারকাজ পরিচালনার জন্য সামান্য অক্সিজেন সিলিন্ডার সহ কত শত সামগ্রীর নিদারুণ দুষ্প্রাপ্যতা। বিপুল সংখ্যক মানুষ, বিশেষতঃ তরুণেরা কারো আবেদন ও আহ্বান এর অপেক্ষা না করেই ছুটে এসেছেন । সিভিল ভলান্টিয়ার এর কাজ করেছেন ।

একের পর এক কতগুলো বহুতল ভবন ও কারখানা আগুনে পুড়ে গেল । পুরনো ঢাকার নিমতলিতে রাস্তা, বাড়ি , দোকান, মার্কেট রাসায়নিক সামগ্রী পুড়ে কী ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করেছে । কত মৃত্যু । এড়ানো যেত না অথবা এড়ানো যেত এমন কত মৃত্যু । মনে পড়ে কী ?

তবুও কী আমাদের নতুন কোন চৈতন্যের তৈরী হয়েছে? অথবা, সতর্কতার স্তরে আমাদের কতটা উন্নতি করতে পেরেছি ?

প্রকৃতিতে , জীবনে , সমাজে দুর্যোগ অস্বাভাবিক ও অসম্ভব কোন ঘটনা নয় । কিন্তু, সেই দুর্যোগ মোকাবিলায় আমাদের ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় আমরা কতটা সচেতন?

করোনা এসেছে আজ। আসার আগেই পূর্বাভাস পাওয়া গেছে । দরজার কড়া নেড়েছে। এখন সম্ভবতঃ জেঁকে বসতে চাইছে । আমাদের পাড়ায় পাড়ায় বসত গড়তে চাইছে । যদিও ভীষণ সংক্রামক, তবুও কিছু সময় আমরা পেয়েছি । হেলায় নষ্ট করেও আরো কিছু করার আছে আমাদের ।

আর সব শেষে, ভ্যাকসিন, নিরাময় এর জন্য ঔষধের সম্ভাবনা ও যথেষ্ট আছে । যা, আমাদের বাঁচিয়ে রাখবে ।

কিন্তু, সব দুর্যোগ, সব বিপদ, সব আক্রমণ, সব দুর্ঘটনা, আরো সব অজানা আকস্মিক ঘটনা কী আমাদের বলে কয়ে আসবে ? ধরুন, কেবল অনুমান করুন , আমরা একটি ভূমিকম্প প্রবণ এলাকা হিসেবে ঝুঁকির মধ্যে আছি । যদি তেমন একটি কিছু ওলট পালট ঘটে , তবে তেমন কিছুর জন্য আমাদের প্রস্তুতি কী ? কতটুকু?

প্রবৃদ্ধি অর্জনের মাত্রা সংখ্যায় প্রকাশিত হয় । কিন্তু, এইসব প্রবৃদ্ধির অর্জন, জীবনকে কদর্যতা থেকে দূরে রাখতে আরো অনেক অনেক দায়িত্বশীলতা আশা করে ।

কবে আমরা ততটা দূরদর্শী হব ?

এপ্রিল ৯, ২০২০