ডাঃ তাপস মিত্রের জন্য শোকগাঁথা

এপ্রি ২৭, ২০২৩

আশির দশকে, এমনকি নব্বই দশকের শুরুতেও বিবিসি ‘র বেতার সংবাদ ছিল বেশ জনপ্রিয় । আমাদের তাপসের স্বপ্ন ছিল বিবিসি থেকে একদিন সংবাদ পাঠ করবে। পরিশীলিত কন্ঠে ঘোষণা করবে “খবর পড়ছি তাপস মিত্র” । চিকিৎসা বিজ্ঞান এর পড়াশোনার চাপে এই স্বপ্ন জলাঞ্জলি দিতে দিয়েছিল। রাজনৈতিক আস্থা ছিল বামপন্থায়। ছাত্র ইউনিয়নে , চট্টগ্রাম জেলা কমিটির সাবেক সাংস্কৃতিক সম্পাদক । চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে ছাত্র ইউনিয়ন এর রাজনীতিতে ছিলেন সক্রিয় । পেশা, সরকারী চাকরির বাধ্যবাধকতায় সক্রিয় রাজনীতি থেকে দূরে থেকেও, বিপদে আপদে ছিল সবসময় । সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে ছিলেন অকুণ্ঠ । সদালাপী, বন্ধু বৎসল, স্মিত হাস্য, কবিতার সমঝদার, মেধাবী ছাত্র থেকে হয়ে উঠেছিলেন নিষ্ঠাবান শিক্ষক ও চিকিৎসক । অজস্র গুণের সমাহার । অনেকের চিকিৎসার সহায়তায় যে ছিল উদারহস্ত, সে চিকিৎসার সুযোগ না নিয়েই আকস্মিকভাবে চলে গেল !

বহুবার ধূমপানের জন্য নিরুৎসাহিত করে হাল ছেড়ে দিয়ে বলত, আমার কাছেই আসবি। ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়াই তোর গতি। আজ সব কিছুর উর্ধে চলে গেছে তাপস।

দু ভাই , বাবা – মা এর সংসার। তাঁর বাবা ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি ডিরেক্টর । এমনি আকস্মিকভাবে ৯২ সালে চলে গিয়েছিলেন । আমরা বন্ধুরা বেশ ক’জন সীতাকুণ্ডে তাঁদের বাড়িতে গিয়েছিলাম । মা ছিলেন স্কুল শিক্ষক । ছোট ভাই ইকনমিক ক্যাডার সার্ভিসের কর্মকর্তা । স্ত্রী, সন্তান , পরিবার, চেম্বার, হাসপাতাল , রোগী নিয়েই ছিল তাপসের দৈনন্দিন ব্যস্ততা। কিন্তু, এর বাইরেও তাপসের জীবনে প্রগতি, মুক্তি চিন্তা, দেশ কাল ভাবনা একটা বড় অংশ জুড়েই ছিল।

আজ সকালে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে মরদেহ বহনকারী হিমায়িত গাড়িতে তাপস। চির শয্যায় সেই তাপস।

আহা, জীবন আর মৃত্যু কত ফারাক করে দেয়।

চলে যাবার জন্য, এই সময়টা খুব অসময়োচিত।

“চলে যাওয়া মানে প্রস্থান নয়- বিচ্ছেদ নয়
চলে যাওয়া মানে নয় বন্ধন ছিন্ন-করা আর্দ্র রজনী।”

অক্টোবর ২৪, ২০২০