ফেব্রুয়ারীর দুঃসাহস

এপ্রি ২৪, ২০২৩

সয়ে যায় , কারণ সয়ে যাওয়াই এখন সহজ । সয়ে যেতে হয়, কারণ সয়ে গেলে জীবনটা সহজতর হয়। কেউ, কেউ বা অনেকেই হয়ত সয়ে নেয় তাইই । সয়ে যাওয়া যেন বুঝি নিয়ম হয়ে ওঠে। সয়ে গেলে জীবনটা পয়োমন্ত হয়ে ওঠে। সয়ে যাওয়া জীবনে শ্রীবৃদ্ধি ঘটে। চেকনাই বাড়ে। সয়ে যাওয়া জীবন আদর্শ স্থানীয় হয়ে ওঠে। মা-বাবা চান তেমন । শিক্ষকের আশা তেমন । ভালবেসে মানুষেরা প্রিয় মানুষের জন্য ও তেমন জীবন কামনা করেন। নির্বিরোধী, নির্বিবাদী মানুষের কাছে তাই জীবন এক টুকরো আহার – নিদ্রা – মৈথুন। মাথার উপর ছাদ। ফ্লোরে টাইলস। ইংলিশ টয়লেট । ঝাঁ চকচকে গাড়ি । বছরান্তে অবকাশ । সারা দিন ভোঁ দৌড়।

শেনঝেন শহরে গিয়েছিলাম । দুনিয়ার সবচেয়ে কম বয়সী তরুণের শহর। একটি পরিকল্পিত শিল্প নগর। গোটা চীনের সবচেয়ে কর্মক্ষম মানব সম্পদ এখানে কাজ করতে শুরু করেন। চল্লিশ পেরিয়ে যাবার আগেই তারা বুড়ো হয়ে ওঠৈন। শরীরের সব রক্ত নিংড়ে দিয়ে তারা প্রস্তুত করেন আই ফোন সহ পৃথিবীর যাবৎ অগ্রগতির নিদর্শন সূচক পণ্য । নিজেদের পণ্য করে তোলার মধ্য দিয়ে তারা যে জগতে প্রবেশ করেন , সেই জগত চায় তারা যোগান দিক আরো পণ্য । শরীরের সব রস দিয়ে তাঁরা নির্মাণ করেন আরো সেসব পণ্য, যা তাকে আরো গভীর ও তীব্রভাবে নিংডে নেবে।

এখন গণচীনে চলছে চাইনিজ নতুন বছরের ছুটি। সারা চীন এখন ছুটির খোঁজে, ছুটির পরে। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি জন অধ্যুষিত দেশে সবচেয়ে বড় ছুটি। মানুষ ছুটে চলেছে প্রিয় মানুষের কাছে । এক বছরের গোলামীর জিঞ্জির থেকে একটুখানি ছুটি । আহা । বিপ্লব বাসনায় তাঁদের পূর্ব পুরুষেরা ছুটেছিল হাজার মাইল। মাও জে দং এর লং মার্চ। দিগন্ত বিস্তৃত ফসলের মাঠ নিজেদের করে নিতে যে চীনের কৃষকেরা হেঁটে গেছে নয়া ভোরের দিশায়। সেই তাদের উত্তর পুরুষেরা আজো হাঁটে । নিজেদের বাঁচাতে, বাঁচার সংগ্রামে। আর দু’হাত ভরে উপচে পড়ছে জ্যাক মা সাম্রাজ্য।

রাশিয়ার বিপ্লবের কামানের তোপগুলো শুধু বারুদ ঠাঁসা ছিলনা। রাশিয়ার শ্রমিকের ও রাশিয়ার কৃষকের বিদ্রোহ ও বিপ্লব এর ক্রোধেও ছিল তা পরিপূর্ণ ।রাশিয়ার বিপ্লব সমগ্র
মানব জাতির মুক্তির প্রত্যয় ঘোষণা করেছিল। রাশিয়ার শ্রমিক ও কৃষক আর তাঁদের উর্দিপরা সন্তানেরা যাঁরা চোখ বুঝতে বুঝতে ও স্ট্যালিন এর নাম জপেছিল, তাঁরা কী তখনো জানতেন এক নতুন শ্রেণীর উদ্ভব ঘটতে চলেছে, যার নাম পার্টিজান ।

পুরনো চীন এর কৃষি শ্রমিক, হাল জমানার শিল্প শ্রমিক, পুরনো রাশিয়ার শ্রমিক ও কৃষক, আর হালের শ্রমিক । পার্থক্য শুধু এটুকুই । পুরনো শোষক আর নির্যাতন এর স্থলে নতুন শাসক। তবে পার্থক্য স্পষ্ট কথায় । যা বুলি ও বাক্যের অধিক হয়ে ওঠে না ।

আমাদের প্রজন্মের মুল লড়াই ছিল গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার। অন্ততঃ ভোট দিয়ে নেতা ও শাসক নির্বাচন এর ক্ষমতা অর্জন । দশক জুড়ে রক্তাক্ত সংগ্রাম যে বিজয় নিয়ে এসেছিল , আজ তাও অতীতের বিষয় । গণতন্ত্র এক দারুণ প্রহসন এখন। আমাদের জীবনের জন্য এখন , সয়ে যাওয়া । সয়ে নেয়া। মেনে নেয়া। সম্ভাব্য আরো খারাপ এর সম্ভাবনা এড়াতে। মন্দের ভাল আনতে । আমাদের যুক্তির অভাব নেই ।

ততদিন, অপর সব। সব আদার। গোল্লায় যাক।
বেঁচে থাকাই কী জিন্দাবাদ নয়?
যখন কার্টুন এঁকে ও কাউকে থাকতে হয় জেলে ।

আমাদের ভাল থাকাথাকি, আমাদের ভালবাসাবাসি জিন্দাবাদ ।

অন্ততঃ, এই জিন্দাবাদ দেয়ার আগে নিজেকে একবার তাকিয়ে দেখুন আপনি এত নুয়ে পড়েছেন যে, আপনার পাছার কাপড় আর নেই। পাছাটি অনাবৃত। একদম। শাসকের ওটাই পছন্দ ।

আপনার পছন্দ আপনি নির্বাচন করুন ।

১৭;ফেব্রুয়ারী, ২০২১