গ্লাডিয়েটর এর রক্ত, দাসদের মর্মন্তুদ জীবনের প্রতিচ্ছবি কলোসিয়াম

জুন ২, ২০২৩

বজ্রপাত, চুরি, আগুনে পোড়া, পাথর চুরি, ভূমিকম্প সহ নানান দূর্যোগের পরও রোমান কলোসিয়াম এখন অবধি টিকে আছে। শুধু রোম নয়, বরং সমগ্র ইতালীর প্রধান আকর্ষণ। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এটি পরিদর্শন করতে আসে। ভেঙে পড়েছে অর্ধেকের মত। খ্রীস্টপূর্ব শতাব্দীতে রোম ছিল প্যাগান বিশ্বাসীদের দেশ।

আনুমানিক ৭০ খ্রীস্টাব্দে এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ফ্লাভিয়ান শাসকদের অন্ততঃ ৩ জনের জমানায় বছর ৩০ ধরে এর নানাবিধ পরিমার্জন সম্পন্ন হয়। লাইমস্টোন, আগ্নেয় পাথর আর সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে এই বিশাল স্থাপনায়। ৪৩,০০০ দর্শক এখানে সমবেত হতে পারতেন। দর্শকের মনোরঞ্জন এর জন্য এখানে প্রদর্শনী হত মানুষের সাথে মানুষের, মানুষের সাথে হিংস্র পশুর সশস্ত্র মরণপণ লড়াই। যে হতভাগা মানুষদের বলা হত গ্লাডিয়েটর। হয় মার, নয়ত মর। এছাড়া বিকল্প কিছু ছিল না। রোমান সাম্রাজ্যের দাসদের মধ্যে যারা বলশালী ছিল তাদের মধ্য থেকেই গ্লাডিয়েটরদের বেছে নেয়া হত। ক্ষুধা, রোগ, দারিদ্র্য যে রোমবাসীর জীবনে নিত্য সঙ্গী ছিল তাদেরকে রক্ত- মৃত্যু ভয়াবহতার পৈশাচিক আনন্দ দিয়ে একঘেয়ে জীবনে কিছু বৈচিত্র্য আনা হত। আর ক্ষমতা- অর্থ- বৈভবের জীবন ভোগ করত যে রাজা এবং ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী তারা এসব বিকৃত আনন্দ নিয়ে ও দিয়ে নিজেদের শাসন নিশ্চিত ও দীর্ঘায়ু করতে চাইত।

এই দাসত্বের জীবনের বিরুদ্ধে বীরোচিত বিদ্রোহ করেছিলেন স্পাটার্কার্স ও তার সাথীরা। চার তলা বিশিষ্ট এই এম্ফিথিয়েটার নির্মিত হয়েছিল। পুরনো রোমে টয়লেটের কোন ব্যবস্থা ছিল না। এই কলোসিয়ামে টয়লেট নির্মাণ এর জন্য প্রজাদের কাছ থেকে কর আদায় করা হয়েছিল। আর টয়লেটের ময়লা বালতি হাতে পরিচ্ছন্ন করতে বাধ্য ছিল দাসরা। দাসদের জীবন মৃত্যু ছিল রাজার দয়া।

দর্শকের আসনও ছিল বিভিন্ন ফ্লোরে বিভক্ত। একটা নিদারুণ সময়ের ও জীবনের স্বাক্ষর কলোসিয়াম। রোমান এম্ফিথিয়েটার। রক্ত ও জীবনের আলেখ্য।
কলোসিয়াম এর পাশেই রোমান ফোরাম।সেখানেও গেলাম।

রোমানরা একসময় দুনিয়ায় নতুন অনেক কিছুই সৃজন করেছিল। তার একটা হল অয়েল ল্যাম্প অর্থাৎ তেলের বাতি। কিন্তু, যে তেলের লাইট এর সলতে হয়ে থাকে গ্লাডিয়েটর আর দাসদের জীবন, সে জীবন বড়ই বেদনার। সে বেদনায় ছুঁয়ে গেছে হৃদয়। শাসকের জন্য গর্বের আর গৌরবের ধন, শাসিত ও নিপীড়িতের জন্য বেদনার আখ্যান।