ছবি দেখা আমার নিত্য কর্ম। দেখছিলাম World War 2 From Frontlines. আটকে গেলাম প্রায় শেষ চিত্রে। পোলিশ বংশোদ্ভূত ১৪ বছর বয়সী এক নারী জার্মান কনসেনট্রেশান ক্যাম্পে আটকে আছে ৩ বছর ধরে। আধপেটা অভুক্ত থেকে ওজন হারিয়ে তখন তিনি ৩০ কেজি ওজনের মানুষ। অথচ বয়স ১৭ বছর। তিনি Gerda Weissman। গোয়েন্দা সুত্রে সংবাদ পেয়ে একদল মার্কিন সৈনিক নিয়ে এলেন লেফটেন্যান্ট Kurt Klein।
দরজায় দাঁড়িয়ে Gerda। অস্ফুট স্বরে তিনি বলছেন ” আমরা ইহুদি “। স্তব্ধ Kurt বলছেন
” আমিও”। অপরাপর বন্দীদের kurt দেখতে চাইলে Gerda তাঁদের দিক নির্দেশ করে উচ্চারণ করেন জার্মান প্রবাদপ্রতিম কবি গ্যোটে’র পংক্তি ” Noble be man, merciful and good “। অজস্র নিপীড়ন, অপমান ও বেদনায় রিক্ত ইহুদি এক তরুণীর তখনো নিজের ভেতর বাঁচিয়ে রাখা মানবিক স্বত্বার প্রবল আলোর ঝলকে বিস্মিত তখন Kurt। যিনি নিজেও জার্মান বংশোদ্ভূত। ইহুদি বিরোধী জার্মান প্রচারণা আগ্রাসন শুরু হবার কিছুটা পূর্বে তার পরিবার তাঁকে পাঠিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। পোলিশ বংশোদ্ভূত Gerda ‘র মানবিক বোধ ও সংবেদন নিয়ে তখনো বেঁচে থাকার অভাবনীয় ঘটনায় হতচকিত তরুণ Kurt
বিস্মিত, অভিভূত। মৃত্যু, ধ্বংস, সকল পরিবার ও পরিজন হারিয়েও জীবনের উজ্জ্বলতায় সমুজ্জ্বল Gerda কে জীবন সঙ্গী করে নেন। নাজী জার্মানির আগ্রাসনের কারণে Gerda তাঁর শিক্ষা জীবন সম্পন্ন করতে পারেননি কিন্তু, তিনি পরবর্তী জীবনে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্মানিক ডক্টরেট ডিগ্রিতে ভূষিত হন। ২০১২ সনে সর্বোচ্চ মার্কিন বেসামরিক পদকে সম্মানিত হন।
শুধু Gerda নন, এরকম শ’য়ে শ’য়ে Holocaust Surviver ইহুদি পৃথিবীতে ছিলেন। তাঁদের অধিকাংশই গত হয়েছেন এসব ভয়াবহ স্মৃতি নিয়ে। কিন্তু তাঁরা রেখে গেছেন স্মৃতি। উত্তর প্রজন্মের জন্য। মরণ সাাগর পাড়ি দিয়ে নবজীবনের উন্মোচন কী নিপীড়িত ও নিপীাড়কের দুর্বিষহ জীবন তাঁদের উদ্বুদ্ধ করেনা একটা নিপীড়ন মুক্ত জীবনের জন্য? আমি জানিনা। হয়ত করে, হয়ত করে না। কাউকে করে, কাউকে করেনা। কেউ বিচলিত হয়, কেউ হয় না। কেন? কেন? কেন? এ প্রশ্ন আমাকে বিচলিত করে। আমি বিহ্বল হই। আমি বিভ্রান্ত হই। আমি হতচকিত হই। খুঁজে যাই উত্তর অন্বেষার তরে। লাখো কোটি মানুষের মত। অতি সাধারণ আমি ও খুঁজে বেড়াই।
আজ সারাদিন তাই খুঁজে গেলাম অন্তর্জালে। সব মানুষ তার চিন্তা হারায়নি। সব মানুষ যুক্তি বোধ বিসর্জন দেয়নি। ভূমধ্যসাগর থেকে আটলান্টিক, প্রশান্ত মহাসাগর থেকে ভারত মহাসাগর। ইহুদি জনগোষ্ঠীর কিয়দংশ হলেও, তাঁরা আওয়াজ তুলেছেন Jews for Palestinians সহ অসংখ্য নামে। সংখ্যায় তাঁরা কত জন তা জরুরী নয়। জরুরী হল এ সকল স্বরের অস্তিত্ব। শুধু আরব দুনিয়ায় তোলপাড় ঘটেনি, তোলপাড় চলছে দুনিয়ায়।
আরব, অনারব, মুসলিম, অমুসলিম, খ্রীস্টান, অখ্রীস্টান, শ্বেতকায় ও কালো কিংবা বাদামী। প্যালেস্টাইনী জনগণের জীবন ও স্বভূমিতে বেঁচে থাকার লড়াই আজ মানুষ বনাম পুঁজির আধিপত্যের লড়াই। ইসরায়েলকে আরব দুনিয়ার মুখে একটা দৈত্যের মত দাঁড় করিয়ে ফায়দা নিতে চায় তেল সাম্রাজ্যের আধিপত্য নিশ্চিত করতে চাওয়া পুঁজি।
সুতরাং, এ লড়াই প্রকৃতপক্ষে পুঁজির মোড়লপনার লড়াই। ভুলে যাওয়ার কোন সুযোগ নেই, মানুষের তথাকথিত জাতিগত শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে শরীক জার্মানি যখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরু করেছিল, তার প্রণোদনা যুগিয়েছিল জার্মান পুঁজি।
আজকের যুগেও পুঁজির আধিপত্য অম্লান। লুটের আধিপত্য ও অটুট। রুপ পাল্টেছে কেবল।
শেষ কথা, আমাদের জাতি একটা জাতিগত নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াই করে স্বাধীন হওয়া জাতি। অথচ কী অবলীলায় আমরা ভুলে যাই, পাহাড় ভূমি পাহাড়ের অধিবাসীদের।
লড়াই আজ জটিল ও বহুমাত্রিক। কিন্তু, লড়াই এর বিকল্প কেবল অধিকতর লড়াই। বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ার লড়াইয়ে আপনি ও বাইরে নন। একটা বাসযোগ্য মানবিক সমাজের গন্তব্যের দিকে আমাদের পথ চলা শুরু হোক।