“আমার যেটুকু সাধ্য করিব তা আমি”

এপ্রি ২৭, ২০২৩


( যুব ইউনিয়ন চট্টগ্রাম জেলা সম্মেলনের বন্ধুদের জন্য নিবেদিত)

সন ১৯৯৫ । দিনটি ছিল বছরের শেষ দিন । আমরা একদল তরুণ । ছাত্রজীবনে সকাল দুপুর বিকেল সন্ধ্যা গড়িয়ে কখনো গভীর রাত কাটানো তরুণেরা বিক্ষিপ্ত ঘুরে বেড়াচ্ছি । কখনো হাজারী লেইনেও যাই । কখনো স্টেডিয়ামের পাশের মাঠে দারুল কাবাবের হাড্ডি চিবোই। মিছিল মিটিং এ কদাচিৎ যাই । ঠিক কোন সংগঠন করিনা । কথার পিঠে কথার মালায় কথা উঠল যুব ইউনিয়নটা করা যাক । ‘৮০ র দশকের প্রাক্তন ছাত্র ইউনিয়ন কর্মীরা, যারা অনেকেই বীতশ্রদ্ধ রাজনীতির প্রতি। ‘৯৩ এ ভাঙাভাঙি আর দেয়ালে যারা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল, তাদের একত্র করা হল । আমিও জুটে গেলাম । যুব ইউনিয়নের গঠনতন্ত্রের কোন কপিও খুঁজে পাওয়া গেল না । তখন প্রকৌশলী হিলালউদ্দীন যুব ইউনিয়নের সভাপতি । কেন্দ্রের সাথে কোন যোগাযোগ হলনা । শহীদ মিনারে সম্মেলন হয়ে গেল । শ’খানেক তরুণ ছিল । উৎপল দত্ত কে সভাপতি, মোহাম্মদ আতিক কে সাধারণ সম্পাদক , আর ডাঃ ফজলে এলাহী মিলাদ কে সাংগঠনিক সম্পাদক করে ৫১ সদস্যের কমিটি । সহসভাপতিরা সকলেই বিভিন্ন সময়ে জেলা- চবি- দক্ষিণ এর সাবেক ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি । সহ সাধারণ সম্পাদকরা ও কেউ ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি কিংবা সাধারণ সম্পাদক । বেশ জোরে সোরেই উৎসাহ নিয়েই কাজ শুরু হল । সময় গড়ায় । কম বেশী পেশার টানে সকলের ব্যস্ততা বাড়ে । কেউ কেউ ঢাকামুখী হন । বিয়ে শাদী নতুন জীবন, নতুন চাকরী কিংবা ব্যবসা কেড়ে নেয়, টেনে নেয়, চুষে নেয় সময় । ঝিমিয়ে পড়তে থাকে কর্মকান্ড । এভাবেই চলতে থাকে । ‘৯৮ এর শেষ দিকে কাউন্সিল করার আলোচনা ওঠে । প্রস্তাব ওঠে না এভাবে নয় । কিছু কাজ হোক । বড় কিছু । সিদ্ধান্ত হয় “যুব উৎসব” করা হবে । তিন দিনের একটা প্রদর্শনী করার আইডিয়া দেন । সাবেক যুব ইউনিয়ন সভাপতি , সাবেক ডাকসু জিএস মাহবুবজামান । তিনি তখন প্রায়শঃ চট্টগ্রামে আসেন । আমাদের ইফতেখার কামাল খান ভাইয়ের সাথে বেশ যোগাযোগ । আমরা কোন এক সন্ধ্যায় চায়ের কাপে পরটা ভিজিয়ে খাই । আর মাহবুবজামান এর প্রদর্শনীর আইডিয়া নেই । ” কম্পিউটার এর ১০১টি ব্যবহার: নিজের জন্য দেশের জন্য”। তখনো কম্পিউটার তত সুলভ নয় । ফজলুল কবির মিন্টু ভাইয়ের একটা কম্পিউটার ট্রেনিং এর দোকান ছিল । তিনি দিলেন পাঁচটি কম্পিউটার । যোগাযোগ হল ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল এর সাথে । তিনি এলেন উৎসবে । অনুষ্ঠানের দুদিন আগে ৪/৫ জন ছাত্র পাঠিয়ে দিলেন জাফর ইকবাল স্যার । ব্যাংকার শ্যামল বিশ্বাস , নসরু এমি আরো বিভিন্নজনের পিসি দিয়ে মোট গোটা চল্লিশেক কম্পিউটার পাওয়া গেল । প্রদর্শনীর শুরুতেই ছিল কাপড় দিয়ে সুন্দর করে ঢেকে রাখা একটি কম্পিউটার । পাশে শিরোনাম লেখা- “আমলার ব্যবহার’। কথা ছিল নাচোল বিদ্রোহের নেত্রী ইলা মিত্র উদ্বোধন করবেন উৎসবের । তাঁর সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন কাকলী বিশ্বাস এর বাবা আর আমার ছোট ভাই কল্লোল চৌধুরী । রাজীও হলেন । কিন্তু পরে চোখের অপারেশনের জন্য আসতে পারেননি । লিখিত বাণী পাঠিয়েছিলেন । এসেছিলেন বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান । ঢাকা থেকে একদল প্রায় বিশ / পঁচিশ জন যুবনেতা এসেছিলেন । তিনদিনের মহাযজ্ঞ। হই হই ব্যাপার । মুসলিম হলের তখন সংস্কার চলছে । পাবলিক লাইব্রেরির সামনের চত্বরে প্যান্ডেল হল । কবি আবুল মোমেন এর সার্বক্ষণিক পরামর্শ ও সহযোগিতা । শ্লোগান ছিল ” জাগো, ওঠো, দাঁড়াও বাংলাদেশ ” । কবি ও লালন গবেষক আবদেল মাননান ভাইকে ধরলাম একটা ফাটাফাটি লিফলেট লিখে দিতে হবে । তিনি বললেন কাগজ কলম নাও । তিনি বলতে শুরু করলেন । আমি লিখলাম । দূর্দান্ত একটা লিফলেট হল । দারুণ একটা পোস্টার । উৎসব কমিটির চেয়ারম্যান উৎপল দত্ত, সদস্য সচিব শিহাব চৌধুরী বিপ্লব । বেশ জমজমাট প্রস্তুতি । ইফতেখার ভাই অর্থ সচিব । ভাউচারে হিসেব লিখছেন । মোহাম্মদ আতিকের কোনটাতেই না নেই । উৎসবের পোস্টারের সাথে মিলিয়ে শিল্পীকে বলা হল ব্যাক ড্রপ করতে । তিনি বাজেট দিলেন ২০০০০ টাকা । তখন উৎসবের তিন দিন বাকী । ইফতেখার ভাই বললেন টাকা আছে অবশিষ্ট পাঁচ হাজার । আমাদের নসরু আর আরো কারা যেন এগিয়ে এল । শোলা কেটে হাজার তিনেক টাকায় ব্যাক ড্রপ ও হল । ক্রাইসিস ম্যানেজম্যান্টে এলেন আতিক ভাই । আমাদের বেশ কয়েকজনকে ডেকে বললেন ৫০০০ টাকা করে ব্যক্তিগত ধার দাও । অভিজ্ঞতায় সবাই জানে , এই ধার কোনদিন পরিশোধ হবে না । বিজ্ঞাপনের বিল থেকে অবশ্য কিছু শোধ হয়েছিল । সে যাই হোক বিপুল অংশগ্রহণ । বিপুল পত্রিকা কভারেজ । প্রদর্শনীর মন্তব্য খাতায় মন্তব্য লিখেন প্রায় ১২০০ জন । তাদের মধ্যে কয়েক শ জন যুব ইউনিয়নের সাথে যুক্ত হবার ইচ্ছেও প্রকাশ করেন । দক্ষিণ জেলার অলক দাশ, শ্যামল দে দারুণ সহযোগিতা করেন । শ খানেক তরুণ নিয়ে দক্ষিণের বন্ধুরা উৎসবের মিছিলেও আসেন । সবাই খুব প্রশংসা করছে । আর শাহাবুদ্দীন ডেকোরেটার্স খুঁজে প্রদীপ ভট্টাচার্যকে । বকেয়ার জন্য । কালে কালে তাও শোধ হয় । এত বড় ও বৈচিত্রপূর্ণ উৎসব এর প্রস্তুতিতে আমরা সময় নিয়েছিলাম তিন মাস । নব্বই দিনের সে প্রস্তুতিকালে যতদূর মনে মিন্টু ভাই, ইফতেখার ভাই আর আমি ৮৫ দিনই বোধ করি হাজারী লেইনে এসেছি । অনেক কথা তো হল । এই উৎসবের যে বিশাল জাল আমরা বিস্তার করেছিলাম, ফাইনালী তার কতটুকু সংগঠনের ভান্ডারে জমা হয়েছিল সে অভিজ্ঞতা খুব সুখকর নয় ।

কিছুদিন পর কাউন্সিল হল । প্রদীপ ভট্টাচার্য সভাপতি ও ইমতিয়াজ সবুজ সাধারণ সম্পাদক । আতিক ভাই, খসরু ভাই ও আমি সহ সভাপতি । যদিও আমরা গতিহীন ছিলাম না । ২০০১ সন শিল্পকলা, চট্টগ্রামে করলাম দুদিন ব্যাপী লোক সংস্কৃতি উৎসব । তখন শিল্পকলার খোলা মাঠ ছিল অনেক বড় । মোহাম্মদ আতিক চেয়ারম্যান , আমাদের বন্ধু ইউনিলিভারের বড় কর্মকর্তা প্রকৌশলী ইনাম আহমেদ চঞ্চলক কো চেয়ারম্যান করে কমিটি হয়েছিল । সদস্য সচিব কে ছিলেন মনে নেই । উদীচী কর্মী শিমুল সেন ছিলেন সাংস্কৃতিক কমিটির আহবায়ক ছিলেন । হাজার হাজার মানুষে লোকারণ্য এ উৎসবের ব্যাকড্রপ করেছিলেন তাসাদ্দুক হোসেন দুলু । ঠিক যেন নকশী কাঁথা ।”ফিরে চল, মাটির টানে” ছিল উৎসবের শ্লোগান । ফরিদা পারভীন এসেছিলেন । কুষ্টিয়া থেকে বাউল ।টাকা পয়সা শেষ । উৎসব ও শেষ । তহবিল করতে হবে । ঠিক হল দর্শনীর বিনিময়ে গান ও নৃত্যানুষ্ঠান হবে । রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা গাইলেন, তামান্না রহমান এর নৃত্য । হল ভর্তি মানুষ । সে সময়েই পঞ্চাশ হাজার টাকার তহবিল হল । ১০০, ২০০, ৫০০ টাকার টিকিট । কারো চুরুটে টান দেয়া শ্লেষোক্তি আজো কানে ভাসে।” হু, গান শুনিয়ে ফান্ড! ” কিন্তু হয়েছিল ।

পরবর্তী সম্মেলন ২০০৩ সন । আহমেদ খসরু সভাপতি,শিমুল সেন সাধারণ সম্পাদক হলেন । যথারীতি আমি ও আছি সহ সভাপতি। বেশ উৎসাহ উদ্দীপনা । ৩১ ডিসেম্বর ২০০৩ সীতাকুন্ডের কুমিরা থেকে চট্টগ্রাম শহীদ মিনার পদযাত্রা কর্মসূচি নেয়া হল । বন্ধ কারখানা খুলে দেয়ার দাবীতে । শীতের প্রচন্ড ঠান্ডাকে উপেক্ষা করে শ’তিনেক তরুণ আমরা শুরু করেছিলাম । রাতটা শীতলপুর স্কুলে কাটিয়ে ১লা জানুয়ারী বিকেলে পৌঁছলাম আমরা শহীদ মিনার । তেল গ্যাস বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা কমিটির নেতা প্রকৌশলী শহীদুল্লাহ সাহেব এসেছিলেন । কত কত দিন ও রাত আমরা মেতে ছিলাম যুব আন্দোলনের নানান কাজে । তখন ডেঙ্গুর প্রকোপ ছিল । আমরা অন্ততঃ চারটি এলাকায় ঝাড়ু, ফিনাইল নিয়ে ময়লা পরিষ্কার করেছি । চট্টগ্রামে প্রথম বসন্ত উৎসব ও এই সময়েই হয় । শিল্পী অজিত রায় এসেছিলেন । অধ্যাপক Rosy Mozumder Sen এ সময়ে সাংস্কৃতিক সম্পাদক ছিলেন । ২০০২ সন। ১ জানুয়ারী । বন্দর রক্ষার দাবীতে ছাত্র ইউনিয়ন সহ পাঁচশ ছাত্র যুবকের মিছিল । প্রেসক্লাব থেকে বন্দর ।

বেলা বয়ে গেছে । ২০০৫ সন । আবার সম্মেলন । বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্ণর ড. আতিউর রহমান এলেন । তখনো তেমন খ্যাত হননি, কিন্তু খুব ভাল গাইছেন বারী । “শ্রাবণ মেঘের দিন” ছবিতে প্লে ব্যাক করেছেন । বারী সিদ্দিকী এলেন । মাত্র ১৫ হাজার টাকা নিয়েছিলেন । কিন্তু ৪টি গান গাইতেই বিদ্যুৎ চলে গেল । বারী ভাই আর গাইতে পারলেন না । সাড়ে চারশ জন উপস্থিত ছিলেন মিছিলে । অবশেষে শিহাব চৌধুরী বিপ্লব সভাপতি, নুরুল আবছার সাধারণ সম্পাদক ।

এই সম্মেলনে সিদ্ধান্ত হয়েছিল যুব ইউনিয়ন এর নিজস্ব কার্যালয় নেবার । যুব ইউনিয়নের নামে অফিস কেউ দেয় না । ” যুব কর্মসংস্থান প্রকল্প ” নাম দিয়ে আমি আর আহমেদ খসরুর যৌথ নামে চেরাগী মোড়ে অফিস নেয়া হল । ভাড়া ২৮০০ টাকা । কথা ছিল অনেকের মাসিক চাঁদার । মাস তিনেক যেতেই দেখা গেল চাঁদা আর ওঠেনা । মাস ছয়েক পর বাড়িওয়ালা জামালউদ্দীন সাহেব দিলেন তালা । কি আর করা ? ইজ্জত রক্ষা দায় । কোনভাবে গাঁটের টাকা দিয়ে অফিসের তালা খোলা হল । যদিও এই কমিটির পরবর্তী সময়ে সে অফিস অর্থাভাবে চালু থাকেনি। তহবিল গড়ে তুলতে আবার দর্শনীর বিনিময়ে গান। এলেন সামিনা চৌধুরী ও সঞ্জীব চৌধুরী । হাজার পঞ্চাশেক টাকার তহবিল হোল । আরো কিছুদিন রক্ষা পেল অফিস । সে সময় আমাদের কয়েকটি থানায় নিয়মিত কিছু কাজ ছিল । শহরে কোতয়ালী, বন্দর, হালিশহর, কিছুটা ডলমুরিং , পাঁচলাইশ আর উপজেলায় মীরসরাই, সীতাকুন্ড, রাংগুনীয়া, রাউজান, হাটহাজারী । মীরসরাই এ কমল ভৌমিক, মীর হোসেন, মাইনুদ্দীন দুলাল আরো বেশ ক’জন , সীতাকুন্ডে কানু বরণ দত্ত ( যিনি চলে গেছেন অকালে, জরুরী আইনের সময়), আরিফুল্লাহ হাই, ইমরান, আকিব, আব্দুল মাবুদ লিটন, Adv Jahir, বন্দরে সেকান্দার, ইকবাল, আবু, সজল, সবুজ , হালিশহরে ইমতিয়াজ সবুজ, হাবিবুল হক বিপ্লব, ডবলমুরিং এ টিপু ভাই, কোতয়ালীতে Shyamol Lodh, মানস, অঞ্জন, মদন, জয়ন্ত, ভানু, রাংগুনীয়ায় ফরিদ ভাই, Sahidul Islam, পাঁচলাইশে Pushpen Roy ,রাউজানে Bikash Bikash, Anirudha Barua, হাটহাজারীতে হোসেন রানা আর অসংগঠিত বিচ্ছিন্ন অনেকে । এই সম্মেলনে ছাত্র ইউনিয়ন থেকে বিদায়ী একদল নেতা একসময়ে যুব ইউনিয়নে আসলেন । মিন্টু, মণি , শ্যামল এমনি অনেকে । একুশে’র একটা দূর্দান্ত প্রকাশনা হল । কর্মসংস্থান বিশেষতঃ আত্ম কর্মসংস্থানের জন্য গাইড লাইন মূলক একটা প্রকাশনাও হল । Suman Chowdhury Mony আর মিন্টু চৌধুরী ‘র এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা ছিল । মাঝে নেমে এল জরুরী আইন । প্রায় দু বছর কোন কাজ করাই গেল না । এর মধ্যে নুরুল আবসার ছুটিতে গেলেন । Rajib Dev কে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক করা হল । মোবাইল ফোনের কলরেট কমানোর দাবীতে, ডিসি হিলে রাতে আলোর দাবীতে, লালদিঘী পার্ক খুলে দেয়ার দাবীতে, জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে বেশ কিছু কর্মসূচিও হল । কোতয়ালী তে যুব ইউনিয়ন ও ছাত্র ইউনিয়নের যৌথ উদ্যোগে “দর্শনীর বিনিময়ে বিজ্ঞান বক্তৃতা ” হল । যুব ইউনিয়নের Jayanta Raha, Swagata Dhar আর ছাত্র ইউনিয়নের তাপস রায় ও Kallol Das এর অগ্রণী ভূমিকা ছিল অন্যদের সাথে । জরুরী আইনের মধ্যেই ঘরোয়া রাজনীতি চালু হল । মুসলিম হলে সম্মেলন ২০০৮। যথারীতি টাকার সমস্যা । চাঁদা তোলার লোক ও নেই তেমন । গণচাঁদার তো সুযোগই নেই । বড় ভাই বন্ধু সাংবাদিক Rafiqul Bahar ভাই সাড়ে পাঁচশ জনের একবেলা খাবার দিলেন । অধ্যাপক এম এম আকাশ এসেছিলেন , Abdullah Al Kafee সহ কেন্দ্রীয় নেতারাও । সম্মেলন হোল । আরিফউল্ল্যাহ হাই সভাপতি আর রাজীব দেব সাধারণ সম্পাদক । আর আমার ১৪ বছরের যুব ইউনিয়ন জীবন ও শেষ হয়ে এল প্রায় । এরপর ২০০৯ এ তখনো দায়িত্বে থাকা প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে চট্টগ্রাম বিভাগীয় যুব কনভেনশন পর্যন্ত কিছু কাজ করেছি ।

১৫ বছর সাংগঠনিক ভাবে কাটানো যুব ইউনিয়নের আজ চট্টগ্রাম জেলা সম্মেলন । আমাদের দেশে যুব আন্দোলন এখনো কোন নির্দিষ্ট রুপ নিয়ে দাঁড়ায়নি । নানান পরীক্ষা নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে তা এগোচ্ছে । “ডিম আগে না মুরগী আগে ” এরুপ বিতর্কের মতই , যুব আন্দোলনের সামনে যুব সমাজের নিজস্ব সমস্যা বিশেষতঃ কর্মসংস্থান এর সমস্যা, ঘুষ দূর্নীতি এইসব প্রশ্ন না রাজনৈতিক আদর্শিক প্রশ্ন , কোনটি প্রায়োরিটি পাবে ? এই বিতর্ক রয়েই গেছে । কর্মপন্থা নির্ধারণের পাশাপাশি প্রায়োগিক সমস্যা হল, কিভাবে নিজে বাঁচার লড়াই থেকে সময় বাঁচিয়ে রাজনীতি ও সংগঠন গড়ার লড়াইয়ে তরুণদের টেনে আনতে হবে ? এ এক জটিল ধাঁধা নয় শুধু অত্যন্ত বাস্তবোচিত প্রশ্ন । যে কারণে সপ্তাহের কর্মদিবস বাদ দিয়ে ছুটির দিনকেই বেছে নিতে হয়, সম্মেলনের জন্য ।

আমার সন্তানের জন্মদিন ২৮ আগস্ট । যুব ইউনিয়নের ও তাই । যদিও ছাত্র আন্দোলনে হাতে খড়ি, তবুও যুব ইউনিয়নেই কাটিয়েছি আমার রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে বেশী সময় । নিজের ক্ষুদ্র বুদ্ধিতে নানাবিধ প্রায়োগিক নিরীক্ষা ও করার চেষ্টা করেছি । অনেকের হাত ধরে, অনেককে সাথে নিয়ে ।

“নিজে বাঁচ, নিজের জন্য বাঁচ, নিজেকে নিয়ে বাঁচ” আবেদনে যখন পুঁজির মোহনীয় হাতছানি সর্বত্র, তখনো ক্ষুদ্র শক্তি আর মনের দীপ্তি নিয়ে যুব আন্দোলনে রোশনাই ছড়াতে যুব ইউনিয়ের পথচলা দাগ রেখেই যাবে । সে আশাই রাখি । শেষ করি যুব ইউনিয়নের বন্ধুদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে, রবীন্দ্রনাথকে উদ্ধৃত করে।

” কে লইবে মোর কার্য কহে সন্ধ্যারবি
শুনিয়া জগত রহে নিরুত্তর ছবি।
মাটির প্রদীপ ছিল , সে কহিল স্বামী,
আমার যেটুকু সাধ্য, করিব তা আমি ।”

মার্চ ২২, ২০১৯