বড়রা লাইট লাগিয়ে, চটের বেড়া দিয়ে, কোর্ট বানিয়ে ব্যাডমিন্টন খেলছিলেন । আগ্রাবাদ বহুতলা কলোনী । নতুন দাঁড়িয়েছে কলোনীটা । ভবনগুলোর বেড়ে ওঠার দৃশ্য এখনো অস্পষ্ট দেখতে পাই । বহুতলা কলোনীর দেয়াল ঘেঁষেই পাড়া । চাঁটগাইয়া পাড়া । তখনো গ্রাম । এখনো নয় কি ? হয়ত নয়। জানিনা ঠিক । আমরা তখন থাকি আগ্রাবাদ ড্রাগস ল্যাবরেটরী কলোনীতে । দূর থেকে আর কতদূর দেখা যায় ? খুব ভাল মানের শাটল কর্ক দিয়ে খেলা চলছিল । তখন একটি শাটল এর দাম ছিল ৮ টাকা । কালো একটা রিবন মোড়া । সন ১৯৮০ । স্কুলে পড়ি । হাফ প্যান্ট তখনো ছাড়িনি । দুই গেম এর পর বড় ভাইয়েরা শাটলটা ড্রপ করে দেন । ৮ টাকা দামের শাটল কর্ক দিয়ে ব্যাডমিন্টন খেলা , আমার মত কচি বয়েসীদের জন্য তখন স্বপ্ন । আর প্লাস্টিকের শাটল কর্ক তখনো বিরক্তিকর, এখনো যেমন । ওজনে ভারী । ইচ্ছে মতন ওড়ে না । আরো একটা শাটল ছিল । সবুজ রিবন মোড়া। সেটি মুচড়ে যায় খুব অল্পে ।
যা হোক খেলা চলছে । ফেলে দেওয়া বা পরিত্যক্ত শাটলের অপেক্ষায় আমার মত আরো কিছু বালক, কিশোর অথবা সদ্য তরুণ । অপেক্ষমানের দীর্ঘ সারিতে ভীষণ লম্বা বক্কইরয্যা ( বক্কর ) ও আছে । দু ঘন্টা খেলা দেখে , ফেলে দেওয়া শাটলটা আমার সামনে পড়ল । আমি জানতাম, বাকীরাও এই শাটলের অপেক্ষায় । সুতরাং, নো মিস্। হাতে নিয়েই দিলাম ছুট । ভোঁ দৌড় । বহুতলা কলোনী প্রায় পার হবো , হচ্ছি । কানের প্রায় কান ঘেঁষে চটি চপ্পলের দৌড়োনোর শব্দ । মনে হল, এই বুঝি বক্করের থাবা পড়ল পিঠে । ফেলে দিলাম নয়, ছুঁড়ে দিলাম শাটল কর্ক । ওরা খুঁজে পেতে নিল । আমি নিরাপদে বাড়ি ফিরলাম । নিরাশ মনে । জীবনে সেই দিন পড়ে পাওয়া ধন, আর পড়ে পাওয়া বস্তুর মায়া ছেড়েছি। আর চাইনি ফিরে। এখনো নয় ।
শাটল কর্ক এক শটে ঐদিক যায়। আর ফিরতি শটে ফিরে আসে এদিকের কোর্টে । পেটায় যাঁরা তাঁরা জানেন আর লক্ষ্য রাখেন , বিপক্ষ যেন ফিরাতে না পারেন । যেভাবে ভাবা হয় , তাতো আর ঘটেনা । শাটলের ধর্ম হলো, এপ্রান্ত ওপ্রান্তে কাঙ্খিত বস্তু হওয়া, যা কোন এক পক্ষ মাথায় রাখবে । শাটলের কোন ধর্ম নেই । শাটলের কোন অনুরাগ নেই । বিজয়ীর গলার হার । শাটল তুমি তো তার ।
মার্চ ২১,২০১৯